সকলকে ঝিনাইদহ ইনফো সাইটে স্বাগতম জানাচ্ছি। এই সাইটে আমরা ঝিনাইদহের ইতিহাস,ঐতিহ্য আপলোড করবো। ঝিনাইদহ জেলার ইতিহাস,ঐতিহ্য,ভ্রমন কাহিনী আপনিও দিতে পারেন। আমরা আপনার নামসহ এই সাইটে প্রকাশ করবো। আপনার লেখা আমরা প্রত্যাশা করছি। ইমেইল করুন: jhenaidahinfo@gmail.com

Friday, January 17, 2025

বয়স শত বছর পার হলেও বিরতি নেই কাজে

 হুমায়ুন কবির, কালীগঞ্জ,ঝিনাইদহ :  শত বছর পার হয়েছে বয়স । এমন বয়সে নাতি নাতিদের সাথে দুষ্টামিতে মেতে থাকার কথা। সময় কাটানোর কথা গ্রামে বয়স্কদের সাথে গল্প গুজব করে। কিন্তু তিনি তা না করে জীবনের শেষ বয়সে এসেও  করে যাচ্ছেন কাজ। এমনই এক শতবর্ষ পার করা কাজ পাগল ব্যক্তির দেখা মিলবে ঝিনাদের কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগরে অবস্থিত সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত কাজী কম্পিউটার এন্ড ফটোকপির দোকানে। দোকানটিতে সাদা পাঞ্জাবি, পাজামা ও টুপি পরা একজন বয়স্ক ব্যক্তি মাথা নুয়ে টেবিলে থাকা ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্র পৃষ্ঠা ওলট-পালট করে পড়ে বুঝে সাদা কাগজে আবেদন লিখছেন স্বহস্তে। কাজ পাগল বৃদ্ধ  এই ব্যক্তিটি হলেন উপজেলার আলাইপুর গ্রামের বিশ্বাস পাড়ার আজিবর রহমান বিশ্বাসের ছেলে শামসুল রহমান বিশ্বাস।



বয়সের ছাপ শরীরে পড়লেও মনে রয়েছে শামসুর রহমানের ব্যাপক কর্মস্পৃহা। যে কারণে দীর্ঘ ষাট বছর ধরে করে চলা মহোরীর কাজ তিনি এখনো করে যাচ্ছেন। ভূমি অফিসের প্রধান ফটকের সামনের কম্পিউটারের দোকানটিতে গেলেই দেখা মিলবে তার। ওই দোকানে বসেই তিনি ভূমি অফিসে আসা সেবা গ্রহীতাদের মিস কেসের আবেদনের খসড়া লিখে দেন, তা কম্পিউটারে লেখার জন্য । আর এজন্য সেবা গ্রহীতারা তাকে খুশি হয়ে পারিশ্রমিক প্রদান করেন। এভাবে কাজের বিনিময়ে তিনি প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন ।যা তিনি তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যায় করে থাকেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামসুল রহমান ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ের জনক। স্ত্রী,ছেলে মেয়ে নাতি-পুতি নিয়ে সুখের সংসার তার।ছেলে সন্তানরা তার দেখাশুনা ও খাওয়া-দাওয়া এবং সকল দায় দায়িত্ব নিয়েছেন।

তবুও তিনি ঘরে বসে না থেকে ছুটে আসেন কাজে।তৎকালীন সময় লেখাপড়ায় মেট্রিক এর গণ্ডি পেরোতে পারেননি শামসুল রহমান। তাতে কি, তার হাতে লেখা আবেদন হার মানাবে যে কোন উচ্চশিক্ষিত মানুষের লেখাকেও। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো জীবনের এই পড়ন্ত বেলা এসেও লিখতে এবং পড়তে কিংবা কোন কিছু দেখতে তার চোখে ব্যবহার করতে হয় না চশমা। কর্মজীবনের শুরুতে নিজ এলাকার আলাইপুর আলিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় সম্পূর্ণ ফ্রি আরবি পড়াতেন তিনি। এরপর করেছেন কৃষি কাজ। এ পেশাতেও স্থায়ী হতে পারেননি তিনি। এরপর শুরু করেন মহোরীর কাজ। এব পেশায় মন স্থির করে ইতিমধ্যে ৬০ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত করেছেন তিনি। কালীগঞ্জে থানার পশ্চিম পাশের ভূমি জরিপ অফিসে প্রথম ও দ্বিতীয় জরিপে কাজ করছেন শামসুর রহমান। সেই থেকে আজ অবধি তা চলমান রয়েছে। 

কর্মবীর শামসুর রহমান বর্তমান যুব সমাজের জন্য আদর্শ এবং অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারেন। শামসুর রহমানের সহকর্মী মহসীন শাহাদত হোসেন বলেন, শামসুর রহমান চাচার নিকট অনেক মানুষ আসেন আবেদনের খসড়া লিখতে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ পেশায় নিয়োজিত থাকায় অনেক দক্ষতার সাথে  আবেদন লিখতে পারেন। মানুষ তার কাছে এসে উপকার পাই।তার যে বয়স তাতে এখন আর কাজ করার কথা নয়। তবুও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সকলের মাঝে আছেন, আমাদেরও ভালো লাগে চাচাকে পাশে পেয়ে।ভূমি অফিসের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থিত কাজী কম্পিউটার অ্যান্ড ফটোকপি দোকানের স্বত্বাধিকারী কাজী মাহফুজুর রহমান বলেন, মুরুব্বী শামসুল রহমান চাচা ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্র ভালো বোঝেন। উনি একজন ভালো মহোরী।আমার দোকানের চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করেন। আগে হাতে লেখা আবেদন চললেও বর্তমান সব অনলাইন হওয়ায় তিনি আবেদনের খসড়া তৈরি করে দেন গ্রাহকদের। তার লেখা খসড়া আবেদন দেখে আমরা কম্পিউটারে লিখে অনলাইন করি। চাচার পরিচিতজন এবং ভূমি অফিসের অনেকের সহযোগিতায় তিনি গ্রাহকদের সেবা দিয়ে থাকেন। এই বয়সে এসেও যে চাচা কাজ করে যাচ্ছেন এটাই অনেক বড় কথা।  

কাজ প্রিয় শামসুল রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অনেক আগেই বয়স ১০০ পার হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ আল্লার অশেষ রহমতে সুস্থ আছি। কাজ করে যাচ্ছি। অবশ্য আমার ছেলে মেয়েরা নাতি পুতিরা কেউ চায় না আমি কোন কাজ করি। কারণ তারা আমার সব দায়-দায়িত্ব নিয়েছে। তবুও বাড়ি বসে থাকতে ভালো লাগে না। কাজের মধ্যে থাকলে সময়টাও ভালো যায়। এমনকি শরীর এবং  মনও ভালো থাকে। আমি সকাল দশটার দিকে এই দোকানে চলে আসি। প্রতিদিনই কমবেশি কাজ হয়। অনেকের সাথে দেখা হয়, কথা হয়। পাশের মসজিদে নামাজ আদায় করি। এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিন। কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করাই আমার জীবনের শেষ ইচ্ছা।

No comments:

Post a Comment