সকলকে ঝিনাইদহ ইনফো সাইটে স্বাগতম জানাচ্ছি। এই সাইটে আমরা ঝিনাইদহের ইতিহাস,ঐতিহ্য আপলোড করবো। ঝিনাইদহ জেলার ইতিহাস,ঐতিহ্য,ভ্রমন কাহিনী আপনিও দিতে পারেন। আমরা আপনার নামসহ এই সাইটে প্রকাশ করবো। আপনার লেখা আমরা প্রত্যাশা করছি। ইমেইল করুন: jhenaidahinfo@gmail.com

Tuesday, October 24, 2023

এক নজরে কালীগঞ্জ উপজেলা

 কালীগঞ্জ উপজেলা (ঝিনাইদহ জেলা)  আয়তন: ৩১০.১৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১৬´ থেকে ২৩°২৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০২´ থেকে ৮৯°১৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা, দক্ষিণে যশোর সদর ও চৌগাছা উপজেলা, পূর্বে শালিখা বাঘারপাড়া উপজেলা, পশ্চিমে কোটচাঁদপুর ও চৌগাছা উপজেলা অবস্থিত।জনসংখ্যা ২৮২৩৬৬; পুরুষ ১৪১২৮৭, মহিলা ১৪১০৭৯। মুসলিম ২৩৬৪৫৩, হিন্দু ৪৫১৭৯, খ্রিস্টান ৬৫৮ এবং অন্যান্য ৭৬।জলাশয় প্রধান নদী: চিত্রা,ভৈরব ও বেগবতী। মর্জাদ, মাজদিয়া ও সিমলা বাওড় এবং সাকোট বিল, উত্তর বিল, দিঘার বিল, অরুয়া সালভা বিল এবং তেঁতুল বিল উল্লেখযোগ্য।প্রশাসন কালীগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৬৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

এক নজরে কালীগঞ্জ উপজেলা


প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ এ উপজেলার বারোবাজারে সুলতানী আমলের অনেক পুরাকৃর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। যেমন- গোড়ার মসজিদ, জোড় বাংলা মসজিদ, জোড়বাংলা দিঘি, গলাকাটা মসজিদ, মনোহর মসজিদ, নুনগোলা মসজিদ, পীর পুকুর মসজিদ, চেরাগদানী মসজিদ, ৩৬ গম্বুজ বিশিষ্ট সাতগাছিয়া মসজিদ, শুকুর মল্লিক মসজিদ, বাদেডিহি মসজিদ এবং ঘোপের ঢিবি ও গাজীর ঢিবি উল্লেখযোগ্য। প্রাচীন পুকুর ও দিঘিসমূহ: পীর পুকুর, হাঁস পুকুর, সাত পুকুর, মীরের পুকুর, ঘোড়ামারী পুকুর, চেরাগদানী পুকুর, রাজমাতার দিঘি, সওদাগর দিঘি, গলাকাটা দিঘি, কানাই দিঘি, পাঁচ পীরের দিঘি, বিশ্বাসের দিঘি, বেড় দিঘি, জল ঢালা দিঘি এবং শ্রীরাম রাজার দিঘি প্রভৃতি। এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণ বলরাম দেব বিগ্রহ মন্দির (বলরামপুর), শ্রীরাম রাজার দিঘির দক্ষিণ পাড়ে গাজী-কালু-চম্পাবতীর কবর উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল যশোর এবং ঝিনাইদহ সীমান্তে মহিষাহাটি গ্রামের মান্দারতলা নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর যুদ্ধে ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং আনুমানিক ১০০ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা মান্দারতলা থেকে পিছু হটে এসে পরের দিন ১৪ এপ্রিল দুলালমুন্দিয়ায় প্রতিরক্ষা সৃষ্টি করে। পাকসেনারা পিছন থেকে আক্রমণ করে এবং সেই যুদ্ধে আনুমানিক ১৫০ থেকে ২০০ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন কালীগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৮৮, মাযার ২, মন্দির ৭৫, গির্জা ৪। উল্লেখযোগ্য: বাদশাহী মসজিদ, পীরপুকুর মসজিদ, গলাকাটা মসজিদ এবং নলডাঙ্গার কালীমন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫২.০%; পুরুষ ৫৪.৫%, মহিলা ৪৯.৫%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩২, এতিমখানা ৩, মাদ্রাসা ৩১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ (১৯৬৬), নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), রায়গ্রাম বানিকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২০), হাট বারোবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৩৭), সলিমুন্নেসা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় (১৯৫৩), কোলাবাজার সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬১), চাঁপরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৩), পাঁচ কাহুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৬),  শোয়াইবনগর ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৫৭) এবং বেলাট দৌলতপুর আলিম মাদ্রসা (১৯৪৭)।

পত্র-পত্রিকা  দৈনিক নবচিত্র।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১২, সিনেমা হল ৩, মহিলা সংগঠন ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি  ৬৪.৪০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩৫%, শিল্প ১.১০%, ব্যবসা ১৫.০৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.২৫%, চাকরি ৫.৬৪%, নির্মাণ ১.৩০%, ধর্মীয়  সেবা ০.১২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৯% এবং অন্যান্য ৪.০৮%।

কৃষিভুমির মালিকানা  ভূমিমালিক ৬৩.৪৬%, ভূমিহীন ৩৬.৫৪%। শহরে ৪৪.৪০% এবং গ্রামে ৬৬.৫৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, পাট, গম, পান, সরিষা, তিল, বিভিন্ন জাতের ডাল, শাকসবজি, খেজুর গুড়।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তামাক, খেসারি, ছোলা, যব, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, জাম, জামরুল, লিচু, পেয়ারা।

মৎস্য, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার  এ উপজেলায় মৎস, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ৮৫ কিমি, আধাপাকা ৩৫ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৩৮০ কিমি; রেলপথ ৯ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চিনিকল, বরফকল, ধানকল, তেলকল, ময়দা কল, ডালকল, ওয়েল্ডিং, স’মিল।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ এবং গরুর গাড়ীর চাকা নির্মাণ কারখানা।

হাটবাজার, মেলা   হাটবাজার ৩১, মেলা ২। কালীগঞ্জ, বারোবাজার, কোলা, বালিয়াডাঙ্গা, চাঁপরাইল, কালা ও তত্তিপুর বাজার এবং বারফার বৈশাখী মেলা ও অঙ্গিতের শ্মশানের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   চিনি, ধান, কলা, পান, ডাল, খেজুর গুড়, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসুচির আওতাধীন। তবে ৫৪.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.০%, ট্যাপ ১.১% এবং অন্যান্য ২.৯%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬০.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৫.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, পশু হাসপাতাল ১।

এনজিও  ব্র্যাক, সৃজনী, আশা।  [মো. জুলফিকার আলী ভূট্টো]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কালীগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।

No comments:

Post a Comment