খান জাহানের স্মৃতি-বিজড়িত পূর্বদিকে একটি বারান্দা সংযুক্ত এ মসজিদটি যশোর-ঝিনেদা মহাসড়কের নিমতলা বাস স্টপের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনেদা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার সিংদহ গ্রামের সিংদহ মৌজার সি.এস. ১০০৪ নং দাগে অবস্থিত।
এ মসজিদটি আদিতে এক গুম্বুজ-বিশিষ্ট ছিল। মসজিদটির দক্ষিণে চিত্রা নদী এবং উত্তরে একটি বাঁশঝাড় দেখা যায়। মসজিদটির স্থানীয় নাম ‘খানা-এ-খোদা’ মসজিদ। পূর্বে এখানে একটি ঢিবি ছিল এবং তার নিচে একটি মসজিদ ছিল বলে জনসাধারণের ধারণা ছিল এবং টিনের চালা দিয়ে ঘর তৈরি করে ১৯৯০ সাল থেকে স্থানীয় লোকজন এখানে নামাজ পড়ত। স্থানীয় জনসাধারণ খনন করে মসজিদটি উন্মোচিত করে। জনৈক মনসুর আলী .৩৭ জমিসহ মসজিদটি একটি কমিটিকে দান করেন। মসজিদটি পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষার্ধে নির্মিত বলে অনুমান করা যায়।মসজিদটির মূল প্রার্থনা কক্ষের পূর্বদিকে একটি বারান্দা আছে। প্রার্থনা-কক্ষের পূর্ব দিকে তিনটি প্রবেশ-পথ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে প্রবেশ-পথ রয়েছে। বারান্দার পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে প্রবেশ-পথ রয়েছে। চার কোনার অষ্টভুজাকৃতির বুরুজগুলো ব্যতিরেকে বাইরের দিকে মসজিদটির পরিমাপ ১১ মি. পূর্ব-পশ্চিম ও ৭.৬০ মি. উত্তর-দক্ষিণ। অভ্যন্তর-ভাগে মসজিদটির প্রার্থনা কক্ষটি ৬.৩৫ মি. বর্গাকার এবং বারান্দাটির পরিমাপ ৬.২৫ মি. উত্তর-দক্ষিণ x ১.৭৫ মি. পূর্ব-পশ্চিম। দেওয়ালের পুরুত্ব ১.৪৫ মি.। মসজিদের অভ্যন্তরে কিবলা দেওয়ালের অভ্যন্তর-ভাগে অর্ধ-বৃত্তাকার তিনটি মিহরাব রয়েছে। মধ্যবর্তী মিহরাবটি বৃহত্তর। মসজিদটির অভ্যন্তরে পোড়ামাটির পত্র-পল্লবের নকশা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবের উত্তর পাশে বদ্ধ একটি খাড়া প্যানেল (upright blind panel) রয়েছে। ধারণা করা যায় যে, মসজিদটির প্রার্থনা-কক্ষ একটি বৃহৎ গুম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল এবং বারান্দার ওপর তিনটি ক্ষুদ্র গুম্বুজ ছিল। এ মসজিদটিকে ঝিনেদা জেলার বারবাজারের গোরার মসজিদ ও সুলতানি আমলের অন্যান্য অনুরূপ মসজিদের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
অর্ধ-বৃত্তাকার মিহরাবগুলোর দুই পাশে খাড়া অর্ধ-স্তম্ভ (vertical engaged pilaster) সংযুক্ত আছে। দক্ষিণ দিকের মিহরাবটির উপরের অংশ বহুখাঁজ-বিশিষ্ট। এ মিহরাবটি জ্যামিতিক নকশা-যুক্ত আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে আবদ্ধ। মধ্যবর্তী মিহরাবটি পুষ্প ও লতা-পাতার অলঙ্করণ-যুক্ত আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে আবদ্ধ। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি বাহিরের দিকে উদ্গত। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটির সংস্কার কাজ করেছে এবং গুম্বুজগুলেি পুনর্নির্মাণ করেছে।
লেখক :
ড. খোন্দকার আলমগীর
প্রত্নতত্ত্ববিদ, আর্ট হিস্টোরিয়ান ও লেখক

No comments:
Post a Comment