শাহজাহান আলী বিপাশ:
রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত খাদ্য খেয়ে মানুষ অনাবরত অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে। তাছাড়া এগুলো মাটি পানি ও বায়ু দূষিত হয়ে আমাদের চারপাশের পরিবেশ নষ্ট করে। তাই ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কৃষক কৃষাণীরা জৈব যুদ্ধে কোমর বেধে লেগেছেন। তারা পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখতে খাদ্যের পুষ্টি উপাদান ঠিক রাখতে বাড়ি বাড়িতে জৈব সার উৎপাদন করছেন। বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করে সারা এলাকাকে সারাদেশের মধ্যে অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন। ইতোমধ্যে এ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নকে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্যের ইউনিয়ন ঘোষনা করা হয়েছে। কৃষিতে অবদান রাখায় ওই ইউনিয়নের ৩ কৃষক কৃষাণী বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক লাভ করেছেন। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে ২০১৪ সালে পেয়েছেন উপজেলার মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের কৃষক মরহুম ওমর আলীর কন্যা নেতা মর্জিনা বেগম। ২০১৭ সালে একই গ্রামের হেলাল উদ্দীন। এছাড়াও তাদের পাশের মস্তবাপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগম লাভ করেছেন চলতি ২০২১ সালে। তারা সকলেই জৈব সার উৎপাদন করে ক্ষেতে ব্যবহারের মাধ্যমে বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছেন। তাদের সকলের বাড়ি উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নে।
পদকপ্রাপ্তরা জানান, প্রায় ২ যুগ আগে থেকেই এ উপজেলার কৃষকেরা বাড়ি বাড়িতে জৈব্য সার উৎপাদন ও ক্ষেতে ব্যবহার করে সুফল পেয়ে আসছেন। তারা জানান, এখন জৈব কেঁচো সার উৎপাদন করে প্রতিকেজি ১২ টাকা করে বিক্রি করে আসছেন। তারা জানান, সারাদেশের মধ্যে জৈব্য সার উৎপাদনে তারা শীর্ষস্থানে আছেন। পদকপ্রাপ্তরা প্রত্যেকে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায় হতে জৈব্য সার উৎপাদনে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজার হাজার কৃষক কৃষাণীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এ সারে উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় এবং বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনের জন্য মানুষ উৎপাদনে ঝুঁকছেন। এছাড়াও রাসায়নিক দিয়ে উৎপাদিত খাদ্য খেয়ে মানুষ অনাবরত নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ থেকে বাঁচতে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সরকারের উচ্চ মহল থেকেও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জোর দেয়া হয়েছে। ফলে দিনের পর দিন এর চাহিদা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা জানান, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখায় উপজেলার মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের মর্জিনা বেগম প্রথম ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পান। তিনি নিজে বাড়িতে উৎপাদন করেন জৈব সার। দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েক হাজার কৃষক কৃষাণীকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। কৃষিতে অবদান রাখায় সরকারী সফরে নেপাল সফর করেছেন। এছাড়াও তিনি ২০১৮ সালে মৃত্তিকা গবেষনা ইনষ্টিটিউট পরিবেশ অধিদপ্তর পুরষ্কার পান। একই অধিদপ্তর থেকে পরের বছর ২০১৯ সালে খুলনা বিভাগীয় জয়িতা হন। কৃষিতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের জন্য ২০১২ সালে এলজিডির দেয়া রোপ্য পদক লাভ করেন।
একই ভাবে কৃষিতে অবদান রাখায় ওই গ্রামের বয়োবৃদ্ধ হেলাল উদ্দীন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পান ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই। ২০১৮ সালে পান ঢাকার বাংলাদেশ একাডেমি অফ এগ্রিকালচার পুরষ্কার হিসেবে ১ লক্ষ টাকা ও ক্রেস্ট। এর আগে জাপানভিত্তিক হাঙ্গার ফ্রি ওয়াল্ড পূরষ্কার পান ২০১০ সালে।
সর্বশেষ চলতি ২০২১ সালে ২৭ জুন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পান তাদের পাশের গ্রাম উপজেলার মস্তবাপুর গ্রামের মনোয়ারা বেগম। তিনি কৃষিতে নারীদের উন্নয়নের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষিপদক পান।
এ বছরে পদকপ্রাপ্ত মনোয়ারা বেগম জানান, তাদের উপজেলাতে কয়েক হাজার কৃষক কৃষাণী বাড়ি বাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন কওে নিজেদেও ক্ষেতে ব্যবহার করছেন। সাথে সাথে প্রতিকেজি ১০/১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। যা অন্য জেলা থেকে কৃষকেরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তার দাবি সারাদেশের মধ্যে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শীর্ষস্থানে আছে। তিনি জানান, দিন দিন নিরাপদ খাদ্যের প্রতি মানুষ ঝুঁকে পড়ছেন। সরকারী ভাবেও এর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ রনি লস্কর জানান, তার ইউনিয়নের কৃষক কৃষাণীরা জৈব চাষে সারাদেশের মধ্যে অবস্থান রয়েছে। তার ইউনিয়নের কৃষক কৃষাণীরা অনেক আন্দোলন শুরু করেছেন অনেক আগে থেকেই। তাইতো গত ৩ বছর আগে তার ইউনিয়নকে স্থানীয় ভাবে নিরাপদ খাদ্যের ইউনিয়ন ঘোষনা করা হয়েছে। দেশের খ্যাতিমান কৃষিবিদেরা অনেকেই এ ইউনিয়ন পর্যব্ক্ষেনে এসেছেন। এখন প্রতিবছরই কৃষক কৃষাণীদের মধ্য থেকে কেউ না কেউ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পেয়ে সম্মান বয়ে আনেন। এটা আমাদের সকলের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা খন্দকার মোহাইমেন আক্তার জানান,কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক কৃষাণীরা দিনের পর দিন জৈব পদ্ধতিতে চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নে বাড়ি বাড়ি বাড়িতে জৈব কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন। সাথে সাথে ক্ষেতে ব্যবহারের মাধ্যমে সুফল পাচ্ছেন। এছাড়াও স্থানীয় ও অন্য জেলার কৃষকদের কাছে পাইকারী বিক্রি করে সংসারের কাজে লাগাচ্ছেন।
No comments:
Post a Comment