মানুষের মাঝে ভ্রমনের প্রবনতা দিন দিনবৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে তার সাথে বাজেটের ব্যাপারটা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন। সবাই চায় কম খরচে বেশি সংখ্যাক স্থানে ঘুরে আসার সুযোগ। আমার এই লেখায় আপনাদের কম খরচে অধিক সংখ্যক স্থোনে ঘুরে আসার কয়েকটি পরামর্শ দিবো।
এবারে আপনাদের জানাবো কম খরচের কিভাবে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালী, পাথরে বীচ ইনানী কিভাবে ভ্রমন করা যায়।
থমে আপনাকে যেতে হবে ঢাকা সায়েদাবাদ/আরামবাগ/ফকিরাপুল থেকে সরাসরি কক্সবাজারে গাড়ী ছাড়ে ভাড়া পড়বে ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে (নন এসি)। সৌদিয়া, এস আলম , হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, ইকোনো সার্ভিস ,রয়েল কোচ ঈগল পরিবহন সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন বাসে সব সময় আসা যাওয়া করা যায়। তবে রুটে বেশ কিছু ভাল এসি বাস-ও চলে ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা।
কিন্ত আপনি যদি ট্রেনে আসতে চান সেক্ষেত্রে প্রথমে আসতে হবে কমলাপুর থেকে উঠতে হবে, চট্টগ্রাম নেমে ওখান থেকে কক্সবাজারে আসার জন্যে বাস ধরতে হবে হবে, অলংকার মোড কংবা বহদ্দার হাটে এসে সেখান থেকে কক্সবাজারের গাড়ী নিবেন ভাড়া ২৪০ টাকা । সেখানে সোদিয়া, এস আলমা,জেবি এক্সপ্রেস, হানিফ পরিবহন, শ্যামলী টুরিষ্ট কোচ প্রভৃতি গাড়ী কক্সবাজারে উদ্দেশ্যে ছাড়ে।
১ । কক্সবাজারে এসে প্রথমে হোটেল নিবেন, এসেই যদি নিজে নিজে কোন হোটেল নিতে চান, তবে আপনার সাথে কোন রিক্সাওয়াল কিংবা সিএনজি চালক অথবা টমটম চালকের সাথে গিয়ে হোটেল নিবেন না, কারন তারা বিভিন্ন হোটেলের দালাল হিসেবে কাজ করে, হোটেল ওয়ালারা তাদের দেখলে রুমের ভাড়া অটোমেটিকালি বাড়িয়ে দেয়, তাছাড়া অনেক হোটেল মালিকের নিয়োজিত টমটম ও সিএনজি ওয়ালা থাকে তারা কোন না কোন ভাবে আপনাকে তাদের হোটেলে নিয়ে যাবে, অযাচিত ঝামেলা এড়াতে আপনার বুকিং করে আসা অনেক স্বস্তিদায়ক।
আসছেন বেড়াতে তাই হোটেলে ফ্রেশ হয়ে হাল্কা নাশতা সেরে বেরিয়ে পড়ুন ঘুরাঘুরি করার জন্য। নেমে যেতে পারেন সমুদ্রে তবে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার ভাঁটার সময় জেনে নিবেন, বেশী পানিতে নামবেন।
তারপর হোটেল এ এসে কাপড় পরিবর্তন করে শৈবাল সুইমিংপুলে যেতে পারেন । তাছাড়া তারকা হোটেল কক্সটুড়ে, প্রাসাদ প্যারাডাইজ প্রভৃতি হোটেলে গিয়েও সুইমিং করতে পারেন,খরচ হবে জনপ্রতি ১৫০-৩০০ টাকার মধ্যে।
দুপুরের খাবার সস্থা যেকোন হোটেলে খেযে নিতে পারেন।
খাবার খেয়ে হালকা রেস্ট নিয়ে চলে যেতে পারেন দেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালীর উদ্দেশ্যে । ৬ নং ঘাট নামক স্থান থেকে মাত্র ১৫ মিনিট স্পীড বোটে চড়ে যেতে পারেন এই দ্বীপে, ভাড়া নিবে জনপ্রতি ৭৫ টাকা । মহেশখালী ঘাটে নেমে একটা রিক্সা বা অটো নিয়ে আশেপাশের স্পট গুলো ঘুরে দেখতে পারেন, ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা, অবশ্যই ভাল মত দরদাম করে নিবেন । স্পীড বোটে চড়ার অনুভুতিটার সাথে কোন কিছুর তুলনা হবে না, একবার গিয়েই দেখুন না ।
সন্ধ্যার আগেই মহেশখালী থেকে ফিরে বাকিটা সময় ব্যয় করতে পারেন কেনাকাটা করার জন্য । কম টাকায় কেনাকাটা করতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে বার্মিজ মার্কেটে ।
রাতের বেলা সমুদ্র পাড়ে বসে কাটাতে পারেন আর শুনতে পারেন সমুদ্রের শো শো গর্জন ।বসে থাকার জন্য চেয়ার ভাড়া করা প্রতি ঘণ্টা মাত্র ৩০ টাকা।
পরের দিন সকালে সূর্যোদয় দেখতে চাইলে খুব ভোরেই আপনাকে যেতে হবে সমুদ্র পাড়ে।
সকাল বেলার নাশতা টা খুব কম খরচে করতে পারেন যেকোনো বাংলা হোটেল থেকেই । রিটার্ন টিকেট কেটে হোটেলে এসে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে পারেন হিমছড়ি, ইনানির উদ্দেশে।
তবে যাবার আগে অবশ্যই হোটেল চেক আউট করে যাবেন আর ব্যাগপত্র লবিতে চেক-আউট লাগেজ হিসেবে রেখে যেতে পারেন। ফিরে এসে নিতে পারবেন, এই জন্য আপনাকে কোন অতিরিক্ত টাকা পয়সা দিতে হবে না ।
কক্সবাজার শহর থেকে ইনানীর দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। খোলা জীপ, রিকশা কিংবা ব্যাটারী চালিত রিকশাতে করে সেখানে যাওয়া যাবে। খোলা জীপে গেলে জনপ্রতি ভাড়া ১৫০-১৭০ টাকা পড়বে। রিজার্ভ নিলে এটি পড়বে ১২০০ -১৫০০টাকা।রিকশা করে যেতে হলে ভাড়া লাগবে ৩০০-৪০০ টাকা। আর সি এন জি নিয়ে গেলে আসা যাওয়ার ভাড়া পড়বে ৫০০-৬০০টাকা। সৈকত লাগোয়া আকাশ ছোঁয়া পাহাড় এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন যাওয়ার পথেই।
যাত্রা পথেই কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার আসলেই পাবেন হিমছড়ি । উপভোগ করতে পারবেন পাহাড়ের হিম শীতল ঝরণা।
হিমছড়ি পাড় হয়ে আরও ৮কি.মি গেলেই আপনি পৌছে যাবেন ইনানী, যাকে বলা হয়, মিনি সেন্টমার্টিন। উপভোগ করতে পারবেন বিস্তীর্ণ পাথুরে সৈকত। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে প্রচুর প্রবাল বেলাভূমিতে জমা হয়েছে । বিচে চলার উপযোগী চার চাকার বেশ কয়েকটি বাইক সৈকতে চলাচল করে। ১ কিলোমিটার দূরত্বে ভ্রমণ করতে রাউন্ড প্রতি ৫০ টাকা করে দিতে হবে আপনাকে।
কক্সবাজার শহরে ফিরে আপনি হোটেল থেকে ব্যাগ পত্র বুঝে নিয়ে বিকেল এর সময়টা কেনা কাটা করতে পারেন অথবা সমুদ্র পাড়ে চেয়ার ভাড়া করে শেষ সময় টা সূর্যাস্ত দেখতে পারেন গাড়ির সময় এর আগ পর্যন্ত।
এই মৌসুমে বাংলাদেশের সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্টের প্রচুর চাপ থাকে, আর কক্সবাজারের চেয়ে সেন্টমার্টিনে চাপ বলার অপেক্ষা রাখেনা । তাই ভ্রমনে অযাচিত ঝাামেলা এড়ানোর জন্য আগে থেকেই বাসের টিকেট, হোটেল বুকিং ও শীপের টিকেট বুকিং দিয়ে গেলে ভোগান্তি থেকে রেহাই পাওয়া যায়, কোন টেনশন থাকেনা কিংবা অযথা দৌড়াদৌড়ি করতে হয়না । বিশেষ করে শিপের টিকেট টা আগে থেকে বুকিং দিয়ে না গেলে আপনি টেকনাফ গিয়ে পাবেন কিনা শিউর না কারণ শীতকালে প্রতিদিন ৪-৫ টা শিপ গেলেও পর্যটকের সংখ্যা নেহাত কম নয় প্রতিদিন অন্তত পাচ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন গমন করে।

No comments:
Post a Comment